বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১১

পদ্মা তীরে অবাধে চলছে মাটি কাটা

ঈশ্বরদী (বাংলাটাইমস টুয়েন্টিফোর ডটকম): ঈশ্বরদীতে পদ্মানদীর গাইড ব্যাংক সংলগ্ন ফসলী জমি থেকে মাটি চুরি করছে রেলের লিজ নেয়া কতিপয় ব্যক্তি। কৃষকদের দাবীর মুখে রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় অফিস থেকে ব্রিজ প্রকৌশলীর পক্ষে আঃ সেলিম রউফ মাটি কাটার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করলেও বন্ধ হয়নি মাটি কাটা। কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে স্থানীয় থানা প্রশাসন, রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিসের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই রেলওয়ের জায়গা থেকে মাটি চুরি করে ইট খোলায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের পদ্মানদী থেকে পাকশী পেপার মিলে পানি সরবরাহের জন্য বসানো পাম্প ষ্টেশনের ২০০ গজ উত্তরে রেলওয়ের জমি থেকে মাটি কাটা চলছে অবাধে। পদ্মানদীর প্রবল স্রোত থেকে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, সাহাপুর ইউনিয়ন রক্ষাকারী গাইড ব্যাংক সংলগ্ন ফসলের জমি থেকে ৩৫ জনের একটি দল মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।
ট্রাক্টর নামা-উঠার জন্য ঈশ্বরদী শহর রক্ষা বাঁধের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে মাটি কাটা শ্রমিক মোস্তফা ও ভোলা জানান, আমরা শ্রমিক, পেটের দায়ে মাটি কাটতে এসেছি। মাটি সাঁড়া ইউনিয়নের ১টি ভাটায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হবে মাটি কাটার শ্রমিক সর্দার সাবদার হোসেন জানান, তারা শ্রমিক। ইউনিয়নের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এসে রেলের এসব জায়গা নিজের বলে জানিয়ে তাদের মাটি কাটার নির্দেশ দেন। আমরা তাঁর নির্দেশেই এখান থেকে মাটি কাটছি। কৃষক কিংবা সরকারের ক্ষতি আমরা বুঝি না। এলাকাবাসী ও মাঠের কৃষকদের সুত্রে জানা যায়, কতিপয় ব্যক্তি রেলওয়ের সরকারী বিভিন্ন জমি থেকে সম্পূর্ন অবৈধভাবে দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে লাখ লাখ টাকার মাটি কেটে ইট ভাটায় ইট তৈরী করছেন। এসব জমি ভুমিহীন কৃষকদের কাছে রেলওয়ে থেকে লীজ রয়েছে। সেখান থেকেই তারা কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে মাটি কেটে নিয়ে যান। এই কারনে কৃষকরা বৈধভাবে লীজ নিয়েও ফসল উৎপাদন করতে পারেন না। বারবার কৃষকদের পক্ষ থেকে রেলওয়ের সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও অজ্ঞাত কারনে কর্তৃপক্ষ নীরব ভুমিকা পালন করছেন।

এদিকে গাইড ব্যাংক থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি চুরি করায় পদ্মার ভরা যৌবনের সময় নিশ্চিত বাঁধ ভেঙ্গে ঈশ্বরদীসহ পাকশী ও সাহাপুর ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন সংশি¬ষ্ট এলাকাবাসী। যুক্তিতলা এলাকার মৃত কালু মিয়ার ছেলে কৃষক সেন্টু প্রাং জানান, প্রতিবছরই কৃষকদের লীজ নেওয়া জমি থেকে মাটি কাটা হয়। একারনে তাদেরও প্রায় তিনশত কৃষকের চাষ করা প্রায় সাড়ে ৩শ একর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাটি কাটার নেপথ্যের লোবেরা খুবই প্রভাবশালী। এই কারনে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না।
শীত শুরু হওয়ার একমাস আগে ও চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত এখান থেকে মাটি কাটা হয়। এ সময় মাঠে থাকা শত শত বিঘা জমির ফসল ধুলামাটিতে ঢেকে গিয়ে ফসলের ক্ষতি হয়। তাদের অভিযোগ রেলের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজছে এভাবে মাটি লুট করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম সরদার এর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি রেলওয়ে থেকে লীজ নিই। ওরা মাটি বিক্রি করে’।
পাকশী বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিরণ চন্দ্র সাহা জানান, জমি লীজ দেওয়া হয় শুধুমাত্র কৃষি আবাদের জন্য। মাটি কাটার জন্য নয়। সাহাবুল চেয়ারম্যান অথবা তাদের পরিবারের অন্যান্যদের নামে কোন রকম লীজ নেই। তবে রেলওয়ের ভু সম্পত্তি অফিসের বিশেষ সুত্র জানায়, ইট ভাটার একজন যেখান থেকে মাটি কাটাচ্ছেন সেই জমিটি যুক্তিতলা এলাকার মোশারফের ছেলে পাকশী আমতলার পান দোকানদার খায়রুল ইসলাম লীজ নিয়েছেন বলে তারা শুনেছেন।
ঈশ্বরদী অফিসের রেলওয়ের কানুনগো আমিরুল ইসলাম জানান, খায়রুলের নামে কোন জমি লীজ নেই। তিনি গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের নেতারা জোর করে মাটি কাটেন। তারা রেলওয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে মাটি কাটেন বলে শোনা গেলেও তারা টাকা গ্রহনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
পান দোকানদার খায়রুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই জমির মালিকানা দাবী করলেও লীজের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। তবে তিনি চেয়ারম্যান সাহাবুল আলমের ছোট ভাই এর কাছে ওই জমি মাটি কাটার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে জানান।

রেলওয়ের পাকশী ডিভিশনের ডিআরএম একেএম মাহাবুব উল আলম জানান, পদ্মানদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু থানা প্রশাসন অজ্ঞাত কারনে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তবে তিনি এ ব্যাপারে অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবৈধভাবে অনেক কিছুই করতে ও বলতে পারেন।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ সামিউল আলম জানান, মাটি কাটার বিষয়টি রেলওয়ে দায়সারা একটি এজাহার থানায় দিয়ে গেছে। এরপর আর কোন খোঁজ খবর নেই। মাটি কাটার সময় যদি তাঁকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ টেলিফোন কিংবা মোবাইলে জানালে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু তারা তা করছেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ জাকির হোসন জানান, জায়গাটি জনগনের নয়। বিষয়টিতে তাঁদের কিছু করার নেই। কারন বিষয়টি সম্পুর্ন রেলওয়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পাবনা জেলার সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ এমপি জানান, সরকার, কৃষক ও ঊপজেলার লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি করে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোটিপতি হবে তা মেনে নেওয়া হবে না। নিজ দলের হোক আর অন্যদলের হোক রাষ্ট্র ও জনগনের ক্ষতির কারন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন